প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-০২]




রাসুল পূর্ব যুগে মক্কার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থা

আরও পড়ুন-

যমযম কূপ ও মক্কার নেতৃত্ব

মক্কার প্রধান আকর্ষণ হ’ল যমযম কূপ ও কা‘বাগৃহ। দু’টিই আল্লাহর অপূর্ব কুদরতের জ্বলন্ত নিদর্শন। যমযম ও কা‘বাগৃহের সেবা ও তত্ত্বাবধান কার্যের মধ্যে যেমন তাদের উচ্চ মর্যাদা নিহিত ছিল, তেমনি উক্ত মর্যাদা লাভের প্রতিযোগিতাই ছিল তাদের মধ্যকার পারস্পরিক রেষারেষি ও হানাহানির অন্যতম প্রধান কারণ।

তৃষিত হাজেরা ও তার দুগ্ধপোষ্য সন্তান ইসমাঈলের স্বার্থে আল্লাহর হুকুমে সেখানে যমযম কূপের সৃষ্টি হয় (বুখারী হা/৩৩৬৪)। পরবর্তীতে এই পানিকে কেন্দ্র করেই ইয়ামন থেকে আগত ব্যবসায়ী কাফেলা বনু জুরহুমের মাধ্যমে মক্কায় জনবসতি গড়ে উঠে। এরপর ইবরাহীম ও ইসমাঈলের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুমে সেখানে কা‘বাগৃহ নির্মিত হয় (বাক্বারাহ ২/১২৫)। ইসমাঈল তাদের মধ্যে বিবাহ করেন। অতঃপর তাঁর সন্তানেরা বংশ পরম্পরায় যমযম ও কা‘বার মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বে আসীন ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বনু জুরহুম সেখানে বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং কিছু হারামকে হালাল করে। তারা বহিরাগতদের উপর যুলুম করে। এমনকি কা‘বার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত উপঢৌকনাদি ভক্ষণ করে। ফলে আল্লাহ তাদের হাত থেকে দায়িত্ব ছিনিয়ে নেন এবং বনু বকর বিন ‘আবদে মানাত(عبد مناة) বিন কিনানাহ ও গুবশান বিন খোযা‘আহর মাধ্যমে তাদেরকে হটিয়ে দেন। বনু জুরহুম মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়ে ইয়ামনে ফিরে যাওয়ার সময় যমযম কূয়া বন্ধ করে দিয়ে যায়। পরবর্তীতে বনু বকরকে হটিয়ে বনু খোয়া‘আহ মক্কার একক ক্ষমতায় আসে এবং তারা কয়েক যুগ ধরে উক্ত মর্যাদায় আসীন থাকে। এ সময় কুরায়েশ বংশ বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত ছিল। পরে তারা কুছাই বিন কিলাবের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং মক্কার ক্ষমতায় আসে। কুছাই ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরদাদা হাশেমের দাদা। কুছাই খোযা‘আহ গোত্রের শেষ নেতা হুলাইল বিন হুবশিইয়াহ(حُلَيْلُ بْنُ حُبْشِيَّةَ) এর কন্যা হুববা (حُبَّى)-কে বিবাহ করেন বিধায় তারা পরবর্তীতে সর্বদা বনু হাশেমের মিত্র ছিল এবং তারা রাসূল (ছাঃ)-কে তাদের ‘ভাগিনার সন্তান’ বলত। তাছাড়া বনু খোযা‘আহ ধারণা করত যে, তাদের নেতা হুলাইল তার জামাতা কুছাইকে পরবর্তী নেতা হিসাবে অছিয়ত করে গেছেন (ইবনু হিশাম ১/১১৩-১৮)। এভাবে মক্কার নেতৃত্বে ছিলেন প্রথমে বনু জুরহুম। অতঃপর বনু খুযা‘আহ। অতঃপর বনু কুরায়েশ। রাসূল (ছাঃ)-এর আবির্ভাবকালে কুরায়েশ বংশ মক্কার নেতৃত্বে ছিল। অনুমান করা হয়ে থাকে যে, বনু জুরহুম ২১০০ বছর, বনু খুযা‘আহ ৩০০ বছর মক্কা শাসন করেন। তাদের পর থেকে কুরায়েশ বংশ মক্কা শাসন করে (আর-রাহীক্ব ২৮-২৯)।

পক্ষান্তরে বনু খোযা‘আহর হাতে ইতিপূর্বে বিতাড়িত বনু বকর সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধী জোটের মিত্র ছিল। সেকারণ পরবর্তীতে বনু খোযা‘আহর উপর বনু বকরের হামলা ও হত্যাকান্ডের ফলেই হোদায়বিয়ার সন্ধি ভেঙ্গে যায় এবং মক্কা বিজয় ত্বরান্বিত হয়। কুরায়েশ বংশ ছিল বনু ইসমাঈলের শ্রেষ্ঠ শাখা এবং কুরায়েশ বংশের শ্রেষ্ঠ শাখা ছিল বনু হাশেম গোত্র।

আব্দুল মুত্ত্বালিবের স্বপ্ন

কুছাইয়ের পর পর্যায়ক্রমে যখন রাসূল (ছাঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব মক্কার নেতা হন। তিনি পরপর চার রাত্রি স্বপ্নে দেখেন যে, এক ব্যক্তি এসে তাঁকে কূয়া খনন করতে বলছে। চতুর্থ রাত্রিতে তাঁকে কূয়ার নাম ‘যমযম’ ও তার স্থান নির্দেশ করে দেওয়া হয়। তখন আব্দুল মুত্ত্বালিব তাঁর একমাত্র পুত্র হারেছকে সাথে নিয়ে স্থানটি খনন করেন। এ সময় তার অন্যকোন পুত্র সন্তান জন্মলাভ করেনি। কুরায়েশদের সকল গোত্র এই মহান কাজে তাঁর সাথে শরীক হ’তে চায়। তারা বলে যে, এটি পিতা ইসমাঈল-এর কূয়া। অতএব এতে আমাদের সবার অধিকার আছে। আব্দুল মুত্ত্বালিব বললেন, স্বপ্নে এটি কেবল আমাকেই খাছভাবে করতে বলা হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের দাবী মেনে নিতে পারি না’। তখন ঝগড়া মিটানোর জন্য তারা এক গণৎকার মহিলার কাছে বিচার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হেজায ও শামের মধ্যবর্তী উক্ত দূরবর্তী স্থানে পৌঁছার আগেই যখন গোত্রনেতারা পানির সংকটে পড়ে যায় এবং তৃষ্ণায় মৃত্যুর আশংকায় পতিত হয়ে নিজেরা নিজেদের কবর খুঁড়তে শুরু করে, তখন আল্লাহর রহমতে আব্দুল মুত্ত্বালিবের উটের পায়ের তলার মাটি দিয়ে মিষ্ট পানি উথলে ওঠে। যা কওমের সকলে পান করে বেঁচে যায়। এতে তারা কূয়ার উপরে আব্দুল মুত্ত্বালিবের মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যায় এবং তারা সকলে মিলে তার নিকটেই এটি সোপর্দ করে। ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ ছিল যা হযরত আলী (রাঃ) হ’তে ‘হাসান’ সনদে ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেছেন।[১]

এভাবে পানির মালিকানার সাথে সাথে বনু হাশিমের উচ্চ মর্যাদা ও নেতৃত্ব সকলের অন্তরে দৃঢ় আসন লাভ করে। তারা সবাই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং গণৎকার মহিলার কাছে না গিয়েই ফিরে আসেন। যমযম কূপের মালিকানা নিয়ে আর কখনোই ঝগড়া করবেন না বলে তারা প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর থেকে হাজীদের পানি পান করানো (সিক্বায়াহ) ও তাদের খাওয়ানো সহ আপ্যায়ন (রিফাদাহ) করার মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব স্থায়ীভাবে বনু হাশেম-এর উপর ন্যস্ত হয়। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কুরায়েশগণ কা‘বা থেকে দূরে বিভিন্ন কূপ খনন করে পানির চাহিদা মিটাতেন (ইবনু হিশাম ১/১৪২-৪৭)।

বনু জুরহুম মক্কা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় যমযম কূয়ায় দু’টি সোনার হরিণ, বর্ম, তরবারি ইত্যাদি ফেলে যায়। অতঃপর উক্ত তরবারি উঠিয়ে আব্দুল মুত্ত্বালিব কা‘বাগৃহের দরজা ঢালাই করেন এবং হরিণ দু’টিকে দরজার সামনে রেখে দেন বলে যে সব কথা চালু আছে, তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।[২]

[১]. ইবনু হিশাম ১/১৪২-৪৫, সনদ জাইয়িদ খবর ছহীহ, তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৪০।

[২]. ইবনু হিশাম ১/১৪৭; বর্ণনাটি যঈফ, তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৪৪; সীরাহ ছহীহাহ ১/৯২; আর-রাহীক্ব ২৮ পৃঃ।

আব্দুল মুত্ত্বালিবের মানত

আল্লাহর হুকুমে যমযম কূয়া খনন ও তার তত্ত্বাবধায়কের উচ্চ মর্যাদা লাভের পর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আব্দুল মুত্ত্বালিব আল্লাহর নামে মানত করেন যে, যদি আল্লাহ তাঁকে দশটি পুত্রসন্তান দান করেন এবং তারা সবাই বড় হয়ে নিজেদের রক্ষা করার মত বয়স পায়, তাহ’লে তিনি তাদের একজনকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যবহ করবেন। অতঃপর লটারীতে বারবার আব্দুল্লাহর নাম উঠতে থাকে। অথচ সেই-ই ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ! সে অথবা একশ’ উট। এরপর লটারীতে পরপর তিনবার একশ’ উট উঠে আসে। তখন তিনি তা দিয়ে মানত পূর্ণ করেন।[১] হাকীম বিন হেযাম (রাঃ) বর্ণিত যঈফ হাদীছে এসেছে যে, এটি ছিল রাসূল (ছাঃ) জন্মের পাঁচ বছর পূর্বের ঘটনা’ (হাকেম হা/৬০৪৩, ৩/৫৪৯ পৃঃ)।

উক্ত ঘটনাটি প্রমানিত নয়। তবুও যদি সত্য হয়, তাহ’লে এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহ আব্দুল মুত্ত্বালিবের মানত পরিবর্তনের মাধ্যমে আব্দুল্লাহর ঔরসে তাঁর শেষনবীর জন্মকে নিরাপদ করেছেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কৌশল বুঝা বান্দার পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে,الذَّبِيْحَيْنِ أَنَا اِبْنُ ‘আমি দুই যবীহ-এর সন্তান’ অর্থাৎ যবীহ ইসমাঈল ও যবীহ আব্দুল্লাহর সন্তান’ বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে, তার কোন ভিত্তি নেই(لاَ أَصْلَ لَهُ)।[২]

[১]. ইবনু হিশাম ১/১৫১-৫৫; বর্ণনাটি যঈফ, তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৪৮। ড. আকরাম যিয়া ঘটনাটিকে ইবনু আববাস থেকে ‘ছহীহ’ বলেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ১/৯২-৯৩)। কিন্তু সেটি প্রমাণিত হয়নি। কেননা ‘আব্দুল মুত্ত্বালিবের মানত’ শিরোনামে ইবনু ইসহাক বলেন, فِيمَا يَزْعُمُونَ وَاَللهُ أَعْلَمُ ‘যেমন তারা ধারণা করেন। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’ (ইবনু হিশাম ১/১৫১)। এতেই বুঝা যায়, ঘটনাটি ভিত্তিহীন।

[২]. হাকেম হা/৪০৪৮, ২/৫৫৯; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৩১।

রাসুল পূর্ব যুগে মক্কার ধর্মীয় অবস্থা

কা‘বাগৃহের কারণে মক্কা ছিল সমগ্র আরব ভূখন্ডের ধর্মীয় কেন্দ্রবিন্দু এবং সম্মান ও মর্যাদায় শীর্ষস্থানীয়। সেকারণ খ্রিষ্টান রাজারা এর উপরে দখল কায়েম করার জন্য বারবার চেষ্টা করত। এক সময় ইয়ামনের খ্রিষ্টান নরপতি আবরাহা নিজ রাজধানী ছান‘আতে স্বর্ণ-রৌপ্য দিয়ে কা‘বাগৃহের আদলে একটি সুন্দর গৃহ নির্মাণ করেন এবং সবাইকে সেখানে হজ্জ করার নির্দেশ জারী করেন। কিন্তু জনগণ তাতে সাড়া দেয়নি। বরং কে একজন গিয়ে তার ঐ নকল কা‘বাগৃহে (?) পায়খানা করে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি প্রায় ৬০ হাযার সৈন্য ও হস্তীবাহিনী নিয়ে মক্কায় অভিযান করেন কা‘বাগৃহকে ধ্বংস করার জন্য। অবশেষে আল্লাহর গযবে তিনি নিজে তার সৈন্য-সামন্ত সহ ধ্বংস হয়ে যান। এতে মক্কার সম্মান ও মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পায় এবং এ ঘটনা বণিকদের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জন্মের মাত্র ৫০ বা ৫৫ দিন পূর্বে এই অলৌকিক ঘটনা ঘটে। বস্ত্ততঃ এটা ছিল শেষনবীর আগমনের আগাম শুভ সংকেত (الْإِرْهَاصُ) মাত্র। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, উক্ত ঘটনার পরে মক্কাবাসীগণ দশ বছর যাবৎ পূর্ণ তাওহীদবাদী ছিল এবং মূর্তিপূজার শিরক পরিত্যাগ করেছিল’।[১]

সমগ্র আরব উপদ্বীপে মক্কা ছিল বৃহত্তম নগরী এবং মক্কার অধিবাসী ও ব্যবসায়ীদের মর্যাদা ছিল সবার উপরে। হারাম শরীফের উচ্চ মর্যাদার কারণে তাদের মর্যাদা আপামর জনগণের মধ্যে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, চোর-ডাকাতেরাও তাদেরকে সমীহ করত।

এটাই যেখানে বাস্তবতা, সেখানে এই যুগটিকে ‘জাহেলী যুগ’(الْأَيَّامُ الْجَاهِلِيَّةُ) কেন বলা হয়? এর কারণ সম্ভবতঃ এটাই ছিল যে, তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর অনুসারী এবং তাওহীদপন্থী হওয়া সত্ত্বেও শিরকে লিপ্ত হয়েছিল। তারা আল্লাহর বিধান সমূহকে অগ্রাহ্য করেছিল এবং খোদ আল্লাহর ঘরেই মূর্তিপূজার মত নিকৃষ্টতম শিরকের প্রবর্তন করেছিল। তারা শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে চিনতে পেরেও তাঁকে অস্বীকার করেছিল। নিঃসন্দেহে এটা ছিল তাদের সবচেয়ে বড় জাহেলিয়াত ও সবচেয়ে বড় মূর্খতা। আর একারণেই ‘জ্ঞানের পিতা’ আবুল হাকাম-কে ‘মূর্খতার পিতা’ আবু জাহল লকব দেওয়া হ’ল।[২] বস্ত্ততঃ ইসলামের বিরোধী যা কিছু, সবই জাহেলিয়াত। আল্লাহ বলেন,أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ ‘তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিচার-ফায়ছালা কামনা করে? অথচ দৃঢ় বিশ্বাসীদের নিকট আল্লাহর চাইতে উত্তম ফায়ছালাকারী আর কে আছে?’ (মায়েদাহ ৫/৫০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ فَهُوَ مِنْ جُثَاءِ جَهَنَّمَ ‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত’।[৩] উল্লেখ্য যে, জাহেলী আরবী সাহিত্যের ইতিহাস ইসলাম আগমনের পূর্বে দেড়শ’ বছরের বেশী নয় (সীরাহ ছহীহাহ ১/৭৯)। এক্ষণে আমরা মক্কায় জাহেলিয়াত প্রসারের ইতিবৃত্ত সংক্ষেপে বর্ণনা করব।-

[১]. হাকেম হা/৩৯৭৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯৪৪।

[২]. বুখারী, ফৎহসহ হা/৩৯৫০-এর আলোচনা, ‘মাগাযী’ অধ্যায় ২ অনুচ্ছেদ ৭/৩৩১ পৃঃ।

[৩]. আহমাদ হা/১৭২০৯; তিরমিযী হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪; সনদ ছহীহ।

মক্কায় শিরকের প্রচলন

মক্কার বাসিন্দারা মূলতঃ হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিল এবং তারা জন্মগতভাবেই তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী ছিল। তারা কা‘বাগৃহকে যথার্থভাবেই আল্লাহর গৃহ বা বায়তুল্লাহ বলে বিশ্বাস করত এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করত। তারা এখানে নিয়মিতভাবে ত্বাওয়াফ, সাঈ তথা হজ্জ ও ওমরাহ করত এবং বহিরাগত হাজীদের নিরাপত্তা ও পানি সরবরাহের দায়িত্ব পালন করত। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কোন নবী না আসায় শয়তানী প্ররোচনায় তাদের সমাজনেতা ও ধনিক শ্রেণীর অনেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং এক সময় তাদের মাধ্যমেই মূর্তিপূজার শিরকের প্রচলন হয়, যেভাবে ইতিপূর্বে নূহ (আঃ)-এর কওমের মধ্যে হয়েছিল।

(১) কুরায়েশ বংশের বনু খোযা‘আহ গোত্রের সরদার ‘আমর বিন লুহাই (عَمرو بن لُحَى بن عامر الْخُزاعى) অত্যন্ত ধার্মিক, দানশীল ও দরবেশ স্বভাবের লোক ছিলেন। লোকেরা তাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করত এবং তার প্রতি অন্ধভক্তি পোষণ করত। তাকে আরবের শ্রেষ্ঠ আলেম ও অলি-আউলিয়াদের মধ্যে গণ্য করা হ’ত। অতএব শয়তান তাকেই বেছে নিল তার কার্যসিদ্ধির জন্য। একবার তিনি শামের ‘বালক্বা’ (الْبَلْقَاء) অঞ্চলের ‘মাআব’ (مَآب) নগরীতে গিয়ে দেখেন যে, সেখানকার লোকেরা জমকালো আয়োজনের মাধ্যমে ‘হুবাল’ (هُبَل) মূর্তির পূজা করে। তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে যে, আমরা এই মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করলে বৃষ্টি হয় এবং সাহায্য প্রার্থনা করলে সাহায্য পাই’। এরা ছিল আমালেক্বা গোত্রের লোক এবং ইমলীক্ব বিন লাবেয বিন সাম বিন নূহ-এর বংশধর।[১] আমর ভাবলেন অসংখ্য নবী-রাসূলের জন্মভূমি ও কর্মভূমি এই শামের ধার্মিক লোকেরা যখন ‘হোবল’ মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করে, তখন আমরাও এটা করলে উপকৃত হব। ফলে বহু মূল্যের বিনিময়ে আমর একটা হোবল মূর্তি খরীদ করে নিয়ে গেলেন এবং মক্কার নেতাদের রাযী করিয়ে কা‘বাগৃহে স্থাপন করলেন। কথিত আছে যে, একটা জিন আমরের অনুগত ছিল। সেই-ই তাকে খবর দেয় যে, নূহ (আঃ)-এর সময়কার বিখ্যাত অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব, নাসর (নূহ ৭১/২৩) প্রতিমাগুলি জেদ্দার অমুক স্থানে মাটির নীচে প্রোথিত আছে। আমর সেখানে গিয়ে সেগুলো উঠিয়ে এনে তেহামায় রেখে দিলেন। অতঃপর হজ্জ-এর মওসুমে সেগুলিকে বিভিন্ন গোত্রের হাতে সমর্পণ করলেন। এভাবে আমর ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ইসমাঈল (আঃ)-এর দ্বীনে পরিবর্তন আনেন এবং তাওহীদের বদলে শিরকের প্রবর্তন করেন (আর-রাহীক্ব ৩৫ পৃঃ)।

অতঃপর বনু ইসমাঈলের মধ্যে মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রসার ঘটে। নূহ (আঃ)-এর কওমের রেখে যাওয়া অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব, নাস্র (নূহ ৭১/২৩) প্রভৃতি মূর্তিগুলি এখন ইবরাহীমের বংশধরগণের দ্বারা পূজিত হ’তে থাকে। যেমন- বনু হুযায়েল কর্তৃক সুওয়া‘ (سُوَاع), ইয়ামনের বনু জুরাশ কর্তৃক ইয়াগূছ (يَغُوث), বনু খায়ওয়ান কর্তৃক ইয়া‘ঊক্ব (يَعُوق), যুল-কুলা‘ কর্তৃক নাসর (نَسْر), কুরায়েশ ও বনু কেনানাহ কর্তৃক হুবাল (هُبَل) ও উযযা (العُزَّى), ত্বায়েফের বনু ছাক্বীফ কর্তৃক লাত (اللاَّت), মদীনার আউস ও খাযরাজ কর্তৃক মানাত (مَنَاة), বনু ত্বাঈ কর্তৃক ফিল্স (فِلْسُ), ইয়ামনের হিমইয়ার গোত্র কর্তৃক রিয়াম (رِيَام), দাউস ও খাছ‘আম গোত্র কর্তৃক যুল-কাফফায়েন(ذُو الْكَفَّيْن) ও যুল-খালাছাহ(ذُو الْخَلَصَة) প্রভৃতি মূর্তি সমূহ পূজিত হ’তে থাকে (ইবনু হিশাম ১/৭৭-৮৭)।

এভাবে ক্রমে আরবের ঘরে ঘরে মূর্তিপূজার প্রসার ঘটে। ফলে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা‘বাগৃহের ভিতরে ও চারপাশে ৩৬০টি মূর্তি দেখতে পান। তিনি সবগুলোকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেন ও কা‘বাগৃহ পানি দিয়ে ধুয়ে ছাফ করে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমার সম্মুখে (স্বপ্নে) জাহান্নামকে পেশ করা হ’ল, ... অতঃপর আমাকে দেখানো হ’ল ‘আমর বিন ‘আমের আল-খুযাঈকে। জাহান্নামে সে তার নাড়ী-ভুঁড়ি টেনে বেড়াচ্ছে। এ ব্যক্তিই প্রথম তাদের উপাস্যদের নামে উট ছেড়ে দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেছিল (যা লোকেরা রোগ আরোগ্যের পর কিংবা সফর থেকে আসার পর তাদের মূর্তির নামে ছেড়ে দিত)। ঐসব উট সর্বত্র চরে বেড়াত। কারু ফসল নষ্ট করলেও কিছু বলা যেত না বা তাদের মারা যেত না’।[২]

(২) তারা মূর্তির পাশে বসে তাকে উচ্চকণ্ঠে আহবান করত ও তাদের অভাব মোচনের জন্য অনুনয়-বিনয় করে প্রার্থনা জানাতো। তারা ধারণা করত যে, এই মূর্তি তাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যশীল করবে (যুমার ৩৯/৩) এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকটে সুফারিশ করবে (ইউনুস ১০/১৮)।

(৩) তারা মূর্তির উদ্দেশ্যে হজ্জ করত, ত্বাওয়াফ করত, তার সামনে নত হ’ত ও সিজদা করত। ত্বাওয়াফের সময় তারা শিরকী তালবিয়াহ পাঠ করত।لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ ‘হে আল্লাহ! আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, কেবল ঐ শরীক যা তোমার জন্য রয়েছে। তুমি যার মালিক এবং সে যা কিছুর মালিক)। মুশরিকরা ‘লাববাইকা লা শারীকা লাকা’ বলার পর রাসূল (ছাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে ক্বাদ ক্বাদ (থামো থামো) বলতেন।[৩] এজন্যেই আল্লাহ বলেছেন,وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللهِ إِلاَّ وَهُمْ مُشْرِكُونَ ‘তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে। অথচ সেই সাথে শিরক করে’ (ইউসুফ ১২/১০৬)। 

(৪) তারা মূর্তির জন্য নযর-নেয়ায নিয়ে আসত এবং মূর্তির নামে কুরবানী করত (মায়েদাহ ৫/৩)। 

(৫) তারা মূর্তিকে খুশী করার জন্য গবাদিপশু ও চারণক্ষেত্র মানত করত। যাদেরকে কেউ ব্যবহার করতে পারত না (আন‘আম ৬/১৩৮-১৪০)। 

(৬) তারা তাদের বিভিন্ন কাজের ভাল-মন্দ ফলাফল ও শুভাশুভ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন প্রকারের তীর ব্যবহার করত (মায়েদাহ ৫/৯০-৯১)। যাতে হ্যাঁ, না, ভাল, মন্দ ইত্যাদি লেখা থাকত। হোবল দেবতার খাদেম সেগুলো একটি পাত্রের মধ্যে ফেলে তাতে ঝাঁকুনি দিয়ে তীরগুলি ঘুলিয়ে ফেলত। অতঃপর যে তীরটা বেরিয়ে আসত, সেটাকেই তারা ভাগ্য মনে করত এবং সে অনুযায়ী কাজ করত। 

(৭) এতদ্ব্যতীত তারা জ্যোতিষীদের কথা বিশ্বাস করত এবং বিশেষ বিশেষ নক্ষত্রকে মঙ্গলামঙ্গলের কারণ মনে করত।[৪] (৮) তারা পাখি উড়িয়ে দিয়ে বা রেখা টেনে কাজের শুভাশুভ ও ভাল-মন্দ নির্ধারণ করত এবং পাখি ডাইনে গেলে শুভ ও বামে গেলে অশুভ ধারণা করত।[৫] তারা ফেরেশতাদেরকে ‘আল্লাহর কন্যা’ বলত এবং জিনদের সাথে আল্লাহর আত্মীয়তা সাব্যস্ত করত (ছাফফাত ৩৭/১৫০-৫২, ১৫৮-৫৯)। তারা নিজেদের জন্য পুত্রসন্তান ও আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান নির্ধারণ করত (নাজম ৫৩/২১-২২)।

[১]. ইবনু হিশাম ১/৭৭। ভাষ্যকার সুহায়লী বলেন, বলা হয়ে থাকে যে, আমরই প্রথম কা‘বাগৃহে মূর্তি পূজার সূচনা করেন। এটি তখনকার ঘটনা, যখন বনু জুরহুমকে বিতাড়িত করে বনু খুযা‘আহ মক্কার উপরে দখল কায়েম করে। আমর বিন লুহাই এ সময় আরবদের নিকট রব-এর মর্যাদা লাভ করেন। তিনি ধর্মীয় বিধান হিসাবে যেটাই করতেন, লোকেরা সেটাকেই গ্রহণ করত। তিনি হজ্জের মৌসুমে লোকদের খানা-পিনা করাতেন ও বস্ত্র প্রদান করতেন। কখনো কখনো এ মৌসুমে দশ হাযার উট যবেহ করতেন ও দশ হাযার জোড়া বস্ত্র দান করতেন। সেখানে একটি পাথর ছিল। ত্বায়েফের ছাক্বীফ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তার উপরে হাজীদের জন্য ছাতু মাখাতেন। সেকারণ উক্ত পাথরটির নাম হয় ‘ছাতু মাখানোর পাথর’ (صَخْرَةُ اللاَّت)। পরে ঐ লোকটি মারা গেলে আমর বিন লুহাই বলেন, লোকটি মরেনি। বরং পাথরের মধ্যে প্রবেশ করেছে। অতঃপর তিনি লোকদের পাথরটিকে পূজা করতে বলেন। লোকেরা তার উপরে একটি ঘর তৈরী করে এর নাম দেয় ‘লাত’ (ইবনু হিশাম ১/৭৭ টীকা-২)। এভাবেই ‘লাত’ প্রতিমার পূজা চালু হয়। যা পরে ত্বায়েফে স্থানান্তরিত হয় এবং ছাক্বীফ গোত্র মুসলমান হওয়ার পরে যা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়’ (দ্রঃ ‘ছাক্বীফ প্রতিনিধি দল’) ।

[২]. বুখারী হা/৩৫২১; মুসলিম হা/৯০৪, ২৮৫৬; মিরক্বাত শরহ মিশকাত হা/৫৩৪১; সীরাহ ছহীহাহ ১/৮৩। ইনিই ছিলেন ‘আমর বিন লুহাই বিন ‘আমের, যিনি সর্বপ্রথম কা‘বাগৃহে ‘হোবল’ মূর্তির পূজা শুরু করেন (ইবনু হিশাম ১/৭৬)।

[৩]. মুসলিম হা/১১৮৫, আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/২৫৫৪ ‘ইহরাম ও তালবিয়াহ’ অনুচ্ছেদ। পক্ষান্তরে ইসলামী তালবিয়াহ হ’ল, لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ ‘আমি হাযির হে আল্লাহ আমি হাযির। আমি হাযির। তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা, অনুগ্রহ ও সাম্রাজ্য সবই তোমার; তোমার কোন শরীক নেই’ (বুখারী হা/৫৯১৫; মুসলিম হা/২৮৬৮)। দ্রঃ ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ বই ৫৪ পৃঃ। বর্তমান যুগে বহু মুসলমান কবরে সিজদা করে ও কবরবাসীর নিকটে পানাহ চায়। অতঃপর মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করে। একই সঙ্গে কবরপূজা ও আল্লাহ্র ইবাদত। যা স্পষ্ট শিরক এবং যা জাহেলী আরবের মুশরিকদের অনুকরণ মাত্র।

[৪]. বুখারী হা/৮৪৬; মুসলিম হা/৭৩; মিশকাত হা/৪৫৯৬-৯৭।

[৫]. মুসলিম হা/৫৩৭; মিশকাত হা/৪৫৯২।

মক্কায় বিদ‘আতের প্রচলন

মূর্তিপূজা সত্ত্বেও তারা ধারণা করত যে, তারা দ্বীনে ইবরাহীমের উপরে সঠিকভাবে কায়েম আছে। কেননা ‘আমর বিন লুহাই তাদের বুঝিয়েছিলেন যে, এগুলি ইবরাহীমী দ্বীনের বিকৃতি নয়, বরং ভাল কিছুর সংযোজন বা ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ মাত্র। এজন্য তিনি বেশকিছু ধর্মীয় রীতি-নীতি চালু করেছিলেন। যেমন-

(১) তারা হজ্জের মওসুমে ‘মুযদালিফায়’ অবস্থান করত, যা ছিল হারাম এলাকার অভ্যন্তরে। হারামের বাইরে হওয়ার কারণে তারা আরাফাতের ময়দানে যেত না বা সেখান থেকে মক্কায় ফিরে আসা অর্থাৎ ত্বাওয়াফে এফাযাহ করত না। যা ছিল হজ্জের সবচেয়ে বড় রুকন। তারা মুযদালেফায় অবস্থান করত ও সেখান থেকে মক্কায় ফিরে আসত। সেজন্য আল্লাহ নির্দেশ দেন,ثُمَّ أَفِيْضُواْ مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ ‘অতঃপর তোমরা ঐ স্থান থেকে ফিরে এসো ত্বাওয়াফের জন্য, যেখান থেকে লোকেরা ফিরে আসে (অর্থাৎ আরাফাত থেকে) (বাক্বারাহ ২/১৯৯)।[১]

(২) তারা নিজেরা ধর্মীয় বিধান রচনা করেছিল যে, বহিরাগত হাজীগণ মক্কায় এসে প্রথম ত্বাওয়াফের সময় তাদের পরিবেশিত ধর্মীয় পোষাক(ثِيَابُ الْحُمْس) পরিধান করবে। সম্ভবতঃ এটা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থদুষ্ট বিদ‘আত ছিল। যদি কেউ (আর্থিক কারণে বা অন্য কারণে) তা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়, তবে পুরুষেরা সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে এবং মেয়েরা সব কাপড় খুলে রেখে কেবল ছোট্ট একটা কাপড় পরে ত্বাওয়াফ করবে। এতে তাদের দেহ একপ্রকার নগ্নই থাকত। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, পুরুষেরা দিনের বেলায় ও মেয়েরা রাতের বেলায় ত্বাওয়াফ করত। তাদের এ অন্যায় প্রথা বন্ধ করার জন্য আল্লাহ আয়াত নাযিল করেন,يَا بَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘হে আদম সন্তান! প্রতি ছালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোষাক পরিধান কর’।[২]

তাদের কাছ থেকে ‘হুম্স’ পোষাক কিনতে বাধ্য করার জন্য তারা এ বিধানও করেছিল যে, যদি বহিরাগত কেউ উত্তম পোষাকে এসে ত্বাওয়াফ করে, তাহ’লে ত্বাওয়াফ শেষে তাদের ঐ পোষাক খুলে রেখে যেতে হবে। যার দ্বারা কেউ উপকৃত হ’ত না’ (ইবনু হিশাম ১/২০২)।

(৩) তাদের বানানো আরেকটা বিদ‘আতী রীতি ছিল এই যে, তারা এহরাম পরিহিত অবস্থায় স্ব স্ব বাড়ীর সম্মুখ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। কিন্তু বাকী আরবরা সকলে স্ব স্ব বাড়ীর পিছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করবে। সম্মুখ দরজা দিয়ে নয়। এভাবে তারা তাদের ধার্মিকতার গৌরব সারা আরবের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,وَلَيْسَ الْبِرُّ بِأَنْ تَأْتُوْا الْبُيُوْتَ مِنْ ظُهُوْرِهَا وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنِ اتَّقَى وَأْتُواْ الْبُيُوْتَ مِنْ أَبْوَابِهَا ‘পিছনের দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ রয়েছে তার জন্য যে আল্লাহকে ভয় করে। অতএব তোমরা গৃহে প্রবেশ কর সম্মুখ দরজা দিয়ে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৯)।[৩]

উপরোক্ত আলোচনায় তৎকালীন আরবের ও বিশেষ করে মক্কাবাসীদের মধ্যে প্রচলিত শিরক ও বিদ‘আত সমূহের একটা চিত্র পাওয়া গেল। যা তারা ইবরাহীম (আঃ)-এর একত্ববাদী দ্বীনে হানীফের মধ্যে ধর্মের নামে চালু করেছিল। আর এটাই ছিল বড় জাহেলিয়াত এবং এজন্যেই এ যুগটিকে ‘জাহেলী যুগ’ বাالْأَيَّامُ الْجَاهِلِيَّةُ বলা হয়েছে।

আল্লাহ বলেন,اللهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُمْ مِنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার হ’তে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা অবিশ্বাস করেছে, শয়তান তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। ওরা হ’ল জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/২৫৭)।

[১]. বুখারী হা/১৬৬৫; মুসলিম হা/১২১৯-২০।

[২]. আ‘রাফ ৭/৩১; ইবনু কাছীর, তাফসীর উক্ত আয়াত।

[৩]. বুখারী হা/১৮০৩; কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ১৮৯ আয়াত।

ইয়াছরিবে ইহূদী-নাছারাদের অবস্থা

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, ইয়াছরিবের অধিবাসী আউস ও খাযরাজগণ ইসমাঈল-পুত্র নাবেত-এর বংশধর ছিলেন। কিন্তু তারা পরে মূর্তিপূজারী হয়ে যায়। সিরিয়া ও ইরাকের পথে ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং মিষ্ট পানি ও উর্বর অঞ্চল বিবেচনায় ইহূদীরা এখানে আগেই আগমন করে। তারা অত্যাচারী রাজা বুখতানছর কর্তৃক কেন‘আন (ফিলিস্তীন) থেকে উৎখাত হওয়ার পরে ইয়াছরিবে এসে বসবাস শুরু করেছিল এই উদ্দেশ্যে যে, তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস হারিয়েছে। অতএব তারা এখন বায়তুল্লাহর নিকটবর্তী থাকবে এবং নিয়মিত হজ্জ-ওমরাহর মাধ্যমে পরকালীন পাথেয় হাছিল করবে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আখেরী নবীর আবির্ভাব যেহেতু মক্কায় হবে এবং তাঁর আবির্ভাবের সময় আসন্ন, অতএব তারা দ্রুত তাঁর দ্বীন কবুল করবে এবং তাঁর নেতৃত্বে আবার বায়তুল মুক্বাদ্দাস দখল করবে। তবে তাদের ধারণা ছিল যে, আখেরী নবী অবশ্যই তাদের নবী ইসহাক-এর বংশে হবেন। কিন্তু তা না হ’য়ে ইসমাঈল-এর বংশে হওয়াতেই ঘটল যত বিপত্তি।

মদীনায় ইহূদীদের আধিক্য ছিল এবং নাছারা ছিল খুবই কম। তাদের মূল অবস্থান ছিল মদীনা থেকে নাজরান এলাকায়। যা ছিল ৭৩টি পল্লী সমৃদ্ধ খ্রিষ্টানদের একটি বিরাট নগরীর নাম। বর্তমানে সড়কপথে এটি মদীনা থেকে ১২০৫ কি.মি. দক্ষিণে ইয়ামন সীমান্তে অবস্থিত।

ইহূদী ও নাছারাদের মধ্যে তাওরাত-ইনজীলের কোন শিক্ষা অবশিষ্ট ছিল না। তাদের ধর্ম ও সমাজনেতারা(الْأَحْبَارُ وَالرُّهْبَانُ) ভক্তদের কাছে ‘রব’-এর আসন দখল করেছিল। ইহূদীরা ওযায়েরকে ‘আল্লাহর বেটা’ বানিয়েছিল এবং নাছারারা মসীহ ঈসাকে একইভাবে ‘বেটা’ দাবী করেছিল (তওবাহ ৯/৩০-৩১)। বরং তারা মারিয়াম, ঈসা ও আল্লাহকে নিয়ে তিন উপাস্যের সমন্বয়ে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল (মায়েদাহ ৫/৭৩)। তাদের পীর-দরবেশরা ধর্মের নামে বাতিল পন্থায় মানুষের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করত এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখতো (তওবাহ ৯/৩৪)। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা হারাম করত না (তওবাহ ৯/২৯)। এক কথায় তাওরাত-ইনজীলের বাহক হবার দাবীদার হ’লেও তারা ছিল পুরা স্বেচ্ছাচারী ও প্রবৃত্তিপূজারী দুনিয়াদার। ঠিক আজকের মুসলিম ধর্মনেতা ও সমাজনেতাদের অধিকাংশের অবস্থা যেমনটি হয়েছে।[১]

[১]. এ যুগের মুসলমানদের অবস্থা বর্ণনা করে ভারতের উর্দূ কবি হালী বলেন,

كرے غير گر بت كى پوجا تو كافر + جو ٹهراے بيٹا خدا كا تو كافر
كہے آگ كو قبلہ اپنا تو كافر + كو اكب ميں مانے كرشمہ تو كافر
مگر مومنوں پر كشاوه ہيں راہيں + پرستش كريں شوق سے جسكى چاہيں
نبى كو جو چاہيں خدا كر د كهائيں + اماموں كا رتبہ نبى سے بڑهائيں
مزاروں پہ دن رات نذريں چڑهائيں + شہيدوں سے جا جا كے مانگيں دعائيں
نہ توحيد ميں كچھ خلل اس سے آئے + نہ اسلام بگڑے نہ ايمان جاے

(১) অন্যেরা যদি মূর্তিপূজা করে, সে হয় কাফের। যে আল্লাহ্র বেটা আছে বলে, সে হয় কাফের। (২) আগুনকে ক্বিবলা বললে, সে হয় কাফের। তারকারাজির মধ্যে যে ক্ষমতা আছে বলে, সে কাফের। (৩) কিন্তু মুমিনদের জন্য রাস্তা রয়েছে খোলা। খুশীমনে সে করে পূজা যাকে সে চায়। (৪) নবীকে যে চায় আল্লাহ বলে দেখায়। ইমামদের সম্মান নবীদের উপর উঠায়। (৫) মাযারগুলিতে দিন-রাত নযর-নিয়ায চড়ায়। শহীদদের কাছে গিয়ে গিয়ে কেবলই দো‘আ চায়। (৬) এতে তাদের তাওহীদে না কোন ত্রুটি আসে। না ইসলাম বিকৃত হয়, না ঈমান যায়’ (আলতাফ হোসায়েন হালী (১২৫৩-১৩৩২ হিঃ/১৮৩৭-১৯১৪ খৃঃ), মুসাদ্দাসে হালী-উর্দূ ষষ্ঠপদী (লাক্ষ্ণৌ, ভারত : ১৩২০/১৯০২) ৪৮ পৃঃ)।

ইবনু কাছীর (রহঃ)-এর মন্তব্য

হাফেয ইবনু কাছীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, আরবের লোকেরা প্রাচীনকালে ইবরাহীমী দ্বীনের অনুসারী ছিল। পরে তারা তাওহীদকে শিরকে এবং ইয়াক্বীনকে সন্দেহে রূপান্তরিত করে। এছাড়াও তারা বহু কিছু বিদ‘আতের প্রচলন ঘটায়। একই অবস্থা হয়েছিল তওরাত ও ইনজীলের অনুসারীদের। তারা তাদের কিতাবে পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। তাতে শাব্দিক যোগ-বিয়োগ করেছিল, রূপান্তর করেছিল ও দূরতম ব্যাখ্যা করেছিল। অতঃপর আল্লাহ মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে প্রেরণ করেন পূর্ণাঙ্গ শরী‘আত দিয়ে, যা সমস্ত সৃষ্টিজগতকে শামিল করে’ (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা জুম‘আ ২ আয়াত)।

এক্ষণে আমরা নবীজীবনের মূল আলোচনায় অগ্রসর হব ইনশাআল্লাহ।-

রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মাক্কী জীবন

শৈশব থেকে নবুঅত

নবী জীবনকে আমরা প্রধান দু’টি ভাগে ভাগ করে নেব- মাক্কী জীবন ও মাদানী জীবন। মক্কায় তাঁর জন্ম, বৃদ্ধি ও নবুঅত লাভ এবং মদীনায় তাঁর হিজরত, ইসলামের বাস্তবায়ন ও ওফাত লাভ।

আরবের মরুদুলাল শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হেজাযের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন ও সেখানে জীবনের ৫৩টি বছর কাটান। যার মধ্যে ১৩ বছর ছিল নবুঅতী জীবন। অতঃপর তিনি মদীনায় হিজরত করেন ও সেখানে জীবনের বাকী ১০ বছর কাটান। অতঃপর সেখানেই ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[১] এক্ষণে আমরা তাঁর বংশ পরিচয় ও জীবন বৃত্তান্ত পেশ করব।

[১]. বুখারী হা/৩৯০২; মুসলিম হা/২৩৫১; মিশকাত হা/৫৮৩৭ ‘অহীর সূচনা’ অনুচ্ছেদ।
 পূর্বপুরুষ

ইবরাহীম (আঃ)-এর দুই পুত্র ছিলেন ইসমাঈল ও ইসহাক্ব। ইসমাঈলের মা ছিলেন বিবি হাজেরা এবং ইসহাকের মা ছিলেন বিবি সারা। দুই ছেলেই ‘নবী’ হয়েছিলেন। ছোট ছেলে ইসহাক্বের পুত্র ইয়াকূবও ‘নবী’ হন। তাঁর অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ অর্থ ‘আল্লাহর দাস’। সে মতে তাঁর বংশ ‘বনু ইস্রাঈল’ নামে পরিচিত হয়। তাঁর বারো জন পুত্রের বংশধরগণের মধ্যে যুগ যুগ ধরে হাযার হাযার নবীর জন্ম হয়। ইউসুফ, মূসা, হারূণ, দাঊদ, সুলায়মান ও ঈসা (‘আলাইহিমুস সালাম) ছিলেন এই বংশের সেরা নবী ও রাসূল। বলা চলে যে, আদম (‘আলাইহিস সালাম) হ’তে ইবরাহীম (‘আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত হযরত নূহ ও ইদরীস (আঃ) সহ ৮/৯ জন নবী ব্যতীত বাকী এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী-রাসূলের[১] প্রায় সকলেই ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশধর অর্থাৎ বনু ইস্রাঈল। যাদের সর্বশেষ নবী ও রাসূল ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। অন্যদিকে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে একজন মাত্র নবীর জন্ম হয় এবং তিনিই হ’লেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। ফলে আদম (আঃ) যেমন ছিলেন মানবজাতির আদি পিতা, নূহ (আঃ) ছিলেন মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা, তেমনি ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন তাঁর পরবর্তী সকল নবীর পিতা এবং তাঁদের অনুসারী উম্মতে মুসলিমাহর পিতা (হজ্জ ২২/৭৮)। ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর হুকুমে দ্বিতীয়া স্ত্রী হাজেরা ও তার পুত্র ইসমাঈলকে মক্কায় রেখে আসেন ও মাঝে-মধ্যে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিতেন। তাঁরা সেখানেই আমৃত্যু বসবাস করেন। অন্যদিকে তাঁর প্রথমা স্ত্রী সারা ও তার পুত্র ইসহাক ও অন্যদের নিয়ে তিনি কেন‘আনে (ফিলিস্তীনে) বসবাস করতেন এবং এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে ইবরাহীম (আঃ)-এর দুই পুত্রের মাধ্যমে মক্কা ও শাম (ফিলিস্তীন) দুই অঞ্চলে তাওহীদের প্রচার ও প্রসার ঘটে।

কুরআনে বর্ণিত পঁচিশ জন নবীর মধ্যে আদম, নূহ, ইদরীস ও মুহাম্মাদ (ছাঃ) বাদে বাকী ২১ জন নবী ছিলেন বনু ইস্রাঈল এবং একমাত্র মুহাম্মাদ (ছাঃ) হ’লেন বনু ইসমাঈল। বলা চলে যে, এই বৈমাত্রেয় পার্থক্য উম্মতে মুহাম্মাদীর বিরুদ্ধে ইহূদী-নাছারাদের স্থায়ী বিদ্বেষের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। সেজন্য তারা চিনতে পেরেও এবং তাদের কিতাবে শেষনবীর নাম, পরিচয় ও তাঁর আগমনের কথা লিখিত থাকা সত্ত্বেও তারা তাঁকে মানেনি।[২]

[১]. আহমাদ হা/২২৩৪২; ত্বাবারাণী, মিশকাত হা/৫৭৩৭ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘সৃষ্টির সূচনা ও নবীগণের আলোচনা’ অনুচ্ছেদ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৬৬৮।
[২]. বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০; আ‘রাফ ৭/১৫৭।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  



*********************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url